Mobile Menu

শাহ্‌ মুহাম্মাদ বাকী বিল্লাহ্ সিদ্দিকী আল-কোরায়েশী (রহঃ)

শাহ্‌ সৈয়দ রশীদ আহমদ জৌন পুরি (রহঃ)
বক্তব্য ও কথোপকথন

প্রশ্নোত্তর পর্ব

(১৪)

দাম্পত্য শান্তি ও ধর্মের আড়ালে যিনা

প্রশ্ন: আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে ওরা স্বামী-স্ত্রী দুজন দিনরাত ঝগড়া করে। ভদ্রলোকের শান্তি বলতে কিছু নেই। অথচ তিনি মুত্তাকী মানুষ। নামাজ রোজা সবই ঠিকমত করেন। তাঁর স্ত্রীও বে-নামাজী নন?

 

উত্তর: শান্তি পাওয়া খুব কঠিন জিনিষ। আর নিজে যে শান্তি না পায়, সে অন্যকে শান্তি দিতে পারে না। আল্লাহ নারীকে সৃষ্টি করেছেন পুরুষের জন্য, পুরুষকে নারীর জন্য। এরা একে অপরের সুকুন হবে, শান্তি হবে এটাই আল্লাহর ইচ্ছা। সূরা রুমের ২১নং আয়াতের দিকে তাকাও, এরশাদ হচ্ছে “ওয়া মিন আয়াতিহি আ’ন খালাকা লাকুম মিন আনফুসিকুম আজওজ্বাল্লি তাসকুনু ইলাইহা ওয়া জ্বায়ালা বাইনাকুম মাওয়াদ্দাতাওঁ ওয়া রাহমাতান ইন্না ফি জ্বা-লিকা লা আয়াতিল্লি কাওমিই ইয়াতাফাক্কারুন”।

 

অর্থাৎ এবং তাঁহার নিদর্শনসমূহের মাঝে রয়েছে এই যে তিনি তোমাদের মাঝ থেকে তোমাদের সঙ্গীনিদের সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা একে অপরের কাছ থেকে শান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক প্রেম ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই চিন্তাশীল ব্যক্তির জন্য এতে রয়েছে বহু নিদর্শন।

 

আল্লাহ হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করার পর হযরত হাওয়া (আঃ)-কে সৃষ্টি করেছেন তার সঙ্গিনী হিসেবে, যাতে তারা একে অপরের সান্নিধ্য শান্তি লাভ করেন। দাম্পত্য প্রেমের মাঝেই নিহিত আছে সমস্ত সৃষ্টির রহস্য। মানব সমাজের এই যে প্রবহমানতা, যুগ যুগ ধরে মানব সমাজ যে টিকে আছেন প্রজাতি হিসেবে এর সমস্ত রহস্য ঐ নারী পুরুষের প্রেমে। তাই এ সম্পর্ক অতি পবিত্র। মানুষ নিজের মনের আবিলতার আলোকে এ সম্পর্ককে দেখে বলেই তার যত অশান্তি। আর এ যে শুধু আজকের ব্যাপার তা নয়। হযরত আদম (আঃ)-এর সন্তানদের মাঝেই শুরু হয়েছিল এ কলহ নারীকে নিয়ে। পরিণামে একজন আরেক জনকে খুন করেছিলো। যে নারীর সৃষ্টি হয়েছিলো শান্তির জন্য সে নারীই হয়ে দাঁড়ায় সমস্ত অশান্তির কারণ।

 

প্রশ্ন: নারীর দোষ কোথায়?

 

উত্তর: আমি নারীর দোষের কথা বলিনি। নারীর মোহিনী শক্তি পুরুষের সমস্ত বিচার বিবেচনা কেড়ে নেয়। পুরুষ তাড়িত হয় প্রেমের দ্বারা নয়, লালসার দ্বারা। আর তাতে নারীও ইন্ধন যোগায়। ফলে আল্লাহ যে শান্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সে শান্তি বিঘ্নিতও হয়।

 

প্রশ্ন: হযরত আদম (আঃ)-এর কথায় একটা কথা মনে পড়লো। সবাই বলে হযরত হাওয়া (আঃ-কে আদম (আঃ)-এর অস্থিপঞ্জর থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এটা কি ঠিক?

 

উত্তর: কোরআনে এ ধরণের কোন কথা নেই। কোরআন বলেছে নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে পুরুষের নাফ্স থেকে, কথাটা হচ্ছে ‘মিন আনফুসিকুম’ অস্থিপাঁজরের কোন কথা এখানে বা কোরআনের অন্য কোথাও নেই।

 

প্রশ্ন: অথচ মাওলানা সাহেবদের বক্তৃতায় প্রায়ই শুনি হযরত হাওয়া (আঃ)-এর সৃষ্টি হয়েছে হযরত আদমের পাঁজর থেকে। যাহোক, দাম্পত্য কলহের কথায় ফিরে আসি। আমাদের হুজুর পাক (সাঃ) এ সম্পর্কে কি বলেছেন?

 

উত্তর: হুজুর পাক (সাঃ) তাঁর বিবাহিত জীবনের অনাবিল শান্তি এবং সুকুন দিয়েই আমাদের দেখিয়ে গেছেন দাম্পত্য জীবনের আদর্শ। তাঁর একাধিক স্ত্রী ছিল, অথচ তাদের কেউই তাঁর উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন না, প্রত্যেকেই মনে করতেন তাঁকেই হুজুর (সঃ) সবচেয়ে বেশী ভালবাসেন। হযরত মায়মুনা (রাঃ)-এর বয়স বেশী ছিলো তা তোমরা সবাই জান। অথচ তিনি হুজুর (সাঃ)-কে কতটা ভালবাসতেন তার প্রমাণ মেলে তাঁর মৃত্যুর আগে দেওয়া ওসিয়াতনামা থেকে। রাসুলে পাক (সাঃ)-এর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল মক্কার অদূরে তাঁবুর মধ্যে। তিনি ইচ্ছা প্রকাশ করেন যে তাঁকে যেন ঠিক সেই স্থানে সমাহিত করা হয়।  আল্লাহ স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালবাসা এবং স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালবাসাকে ফরজ করেছেন। এরা যদি একে অপরকে ভাল না বাসে তবে ফরজ তরক করা হবে, এদের সমস্ত এবাদত বরবাদ হয়ে যাবে। তোমার প্রতিবেশী দম্পতিটি নামাজ পড়েন, কিন্তু আল্লাহর হুকুমটি তামিল করেন না। এদের ঈমান নষ্ট হয়ে যাবার আশঙ্কা আছে, অথচ এরা জানে না।

 

দাম্পত্য প্রেমের অসীম বরকত সম্পর্কে হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস আছে। স্বামী স্ত্রীর মিলনের পর যখন তারা ফরজ গোসল করেন তখন যত বিন্দু পানি তাদের শরীর থেকে বেয়ে ঝরবে তত গুনাহ তাদের মাফ করবেন আল্লাহ (বুখারি ও মুসলিম) । এ সম্পর্কে হযরত আলী (রাঃ)-এর একটি বাণীর কথা তোমাদের আগে বলছি। তিনি বলেছেন, ‘স্বামী স্ত্রী যদি ওজু করে মিলিত হন এবং মিলন শেষে ফরজ গোসল করার আগেই যদি এদের কারো মৃত্যু হয় তবে তিনি শহীদের মর্যাদা পাবেন’।

 

প্রশ্ন: আমাদের মেয়েরা মাঝে মাঝে স্বামীর উপর নির্যাতন করেন এমন কথাও শুনেছি।

 

উত্তর: সে তো করেই, পুরুষেরা যেমন করে, তেমনি তারাও করে। এ ক্ষেত্রে পুরুষের উচিত স্ত্রীর নির্যাতন নীরবে সহ্য করে, ভালবাসা এবং প্রেম দিয়ে তাকে বোঝানো। একদিন না একদিন সে স্ত্রী পরিবর্তন হবেই। এ সম্পর্কেও একটি হাদিস শোন।

 

হুজুর পাক (সাঃ) বলেছেন, যে স্বামী স্ত্রীর অত্যাচার নীরবে সহ্য করে তাকে আল্লাহ প্রতি মুহূর্তে একটি হজ্বের সওয়াব দেবেন (তাফসির ইবনে মালকান)। তোমাদের ঘরে ঘরে কিন্তু নারীর উপর নির্যাতনই চলে বেশী। শারীরিক নির্যাতন তো আছেই। তারা স্বামী হয়ে স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগে করে স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হন। অথচ তারা জানেন না এ কত বড় অধর্মের কাজ। ইবনে মাজাহ কিতাবে বলা হয়েছে যে যদি কোন স্বামী স্ত্রীর উপর এরূপ বলপ্রয়োগ করে তাহলে তা জ্বেনার সামিল হবে। অর্থাৎ তা সম্পূর্ণ ব্যভিচার বলে গণ্য হবে। অথচ তোমাদের ঘরে ঘরে দাম্পত্য জীবনের ছত্রচ্ছায়ায় এ ধরনের কত ব্যভিচারই না দিনের পর দিন চলছে। আরো এক ধরনের নির্যাতন মেয়েদের উপর চলে। হিন্দুদের অনুকরণে এটা করা হয় বলে আমার বিশ্বাস। মেয়েদের রজঃকালীন সময়ে হিন্দুরা তাদের নারীদের এড়িয়ে চলে, তাদের বিছানায় কেউ বসে না ইত্যাদি এক ধরণের একঘরে করে রাখা হয়। ঘরে শ্বাশুড়ী থাকলে তো কথাই নেই। আমাদের ধর্মে কিন্তু এমনটা নেই। মেয়েরা সে সময় সব কাজই করবে, শুধু নামাজ পড়বে না, বা কোরআন হাতে নেবে না। কিন্তু কোরআন মুখস্ত থাকলে পড়তে পারবে। তাদের ব্যবহৃত বিছানায় বসতে কোন বারণ নেই, তাদের হাতে খেতে বারণ নেই। অবশ্য তারা নিজেরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবেন এটা বলাবাহুল্য। সুতরাং শান্তি পেতে হলে, তোমাদের শান্তি অন্বেষণ করতে হবে। রাসূলে পাক (সঃ)-এর জীবনে, তাঁর কথায় ও কাজে, তাঁর জীবনচর্যায় রয়েছে শান্তির ঠিকানা। সে ঠিকানা খুঁজে নাও, জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। না হলে দেরী হয়ে যাবে। মনে রেখ, অধিকাংশ মানুষই মৃত্যু আসার আগেই মরে যাবে। আর তখন তার কানে কোন ভাল কথাই প্রবেশ করে না। তেমন দুর্ভাগ্য যেন তোমাদের না হয়।

প্রশ্নোত্তর পর্ব

আরও পড়ুন...

মোজাদ্দেদে জামান হযরত আবু বকর সিদ্দিকী আল-কোরায়েশী (রহঃ)-এর সিলসিলার আলেম খলিফা ভক্ত ও মুরিদদের প্রতি লক্ষ্য করে ৯০-এর দশকে যে বক্তব্য রেখেছিলেন
প্রশ্ন: আমাদের এই যে ধর্মগ্রন্থ স্বয়ং আল্লাহ্ যাকে স্পষ্ট কিতাব বলেছেন, সে পবিত্র গ্রন্থে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে বারণ করা হয়েছে। কারণ আল্লাহ্ সীমা লংঘনকারীকে পছন্দ করেন না। এই সীমা লংঘনের ব্যাপারটা ঠিক বুঝি না?
প্রশ্ন: আমাদের সমাজে কিছু শিক্ষিত লোক আছেন যারা আল্লাহর অস্তিত্ব বিশ্বাস করেন না – রাসুলে পাক (সঃ)-কে মানেন না। কিন্তু এরা নামে মুসলমান, সামাজিকতা রক্ষার জন্য টুপি মাথায় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে থাকেন।
প্রশ্ন: প্রত্যেক শাস্ত্রেই একটা কথা জোর দিয়ে বলেন ‘নিজেকে জান’। খ্রিষ্টানরা বলে ‘Know Thyself’ হিন্দুরা বলে, ‘আত্মানং বিদ্ধি’। এ কথার অর্থ কি? আমরা তো সবাই নিজেকে নিজে চিনি, সুতরাং এর বাইরে নিজেকে জানার প্রয়োজন কি?
প্রশ্ন: আল-হামদের ব্যাখ্যা শুনে আমরা মুগ্ধ হয়েছি। সূরা ফাতেহার এটি একটি শব্দ মাত্র। সম্পূর্ণ সূরাটি সম্পর্কে কিছু বললে আমার মত অনেকেই খুশী হবেন।
প্রশ্ন: আল্লাহর হুকুম ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না, একথা যদি সত্য হয় তাহলে মানুষ তার পাপের জন্য দোজখে যাবে কেন? ‘যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ’। এ মারফতি গানটি তো আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন।

সূচী – প্রশ্নোত্তর পর্ব 

শাহ্‌ মুহাম্মাদ বাকী বিল্লাহ্ সিদ্দিকী আল-কোরায়েশী (রহঃ) ও
শাহ্‌ সৈয়দ রশীদ আহমদ জৌন পুরি (রহঃ)-তাহাঁদের
বক্তব্য ও কথোপকথন