মোজাদ্দেদে জামান হযরত আবু বকর সিদ্দিকী আল-কোরায়েশী (রহঃ)-এর সিলসিলার আলেম খলিফা ভক্ত ও মুরিদদের প্রতি লক্ষ্য করে ৯০-এর দশকে যে বক্তব্য রেখেছিলেন
শাহ্ মুহাম্মাদ বাকী বিল্লাহ্ সিদ্দিকী আল-কোরায়েশী (রহঃ)
ও
শাহ্ সৈয়দ রশীদ আহমদ জৌন পুরি (রহঃ)
বক্তব্য ও কথোপকথন
প্রশ্ন: ভুল করে কোন অন্যায় বা পাপ করলে আল্লাহ মাফ করে দেবেন বলেই জানি। কিন্তু এই ভুল মানুষ ইচ্ছে করেও তো করতে পারে। সেটা এক ধরনের আত্মপ্রতারণা। কিন্তু এমনটা হতে পারে। ইচ্ছাকৃত ভুল করার পর আল্লাহকে বলতে পারে, হে মাবুদ মাফ কর?
উত্তর: ভুল করে ভুল করলে আল্লাহ বিচার করবেন না এটাই প্রথাগত ধারণা। কিন্তু এটা ভুল ধারণা, অজান্তে ভুল করলে, সে ভুলেরও যে বিচার হবে সেটা অনেকেই জানে না। এ বিচার হবে সাবধান না হওয়ার জন্য। আমাদের ধর্মে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সজাগ থাকতে, সাবধান হতে বলা হয়েছে। এরপরও যদি কেউ ভুল করে সেটা তার অসাবধানতা। বিচার হবে ভুলের নয়, অসাবধানতার।
প্রশ্ন: হুজুর, আজকে আমার একটা বিরাট ভুল ভাঙলো এতদিন আমার ধারণা ছিল ভুল করে যে ভুল হয় তার কোন বিচার আল্লাহ করেন না। আল্লাহ মাফ করে দেন সে ভুল।
উত্তর: আল্লাহ গাফুরুর রাহিম, দয়ার সাগর, তিনি চাইলে সবই মাফ করতে পারেন। কিন্তু মানুষকে তার অসাবধানতার জন্যে শাস্তি পেতে প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ রাসূল পাক (সাঃ) কে বলা হয়েছে, হে রাসূল আপনি বলুন আমি বিভ্রান্ত হইলে বিভ্রান্তির পরিণাম আমারই “কুল ইন দালালতু ফা ইন্নামা আদিলু, আলা নাফসি” (সূরা সাবা/৫০) ।
প্রশ্ন: হুজুর, কথাটা আমার কাছে একেবারেই নতুন লাগছে। বিস্মিত বোধ করছি।
উত্তর: কেন হে, বিস্মিত হবার কি আছে। হযরত ওমর ফারুক (রা:)-এর বেলাতেই দেখ নিজের ছেলের বিচার করলেন। তার ছেলে খুবই পরহেজগার ছিলেন। কিন্তু মুহুর্তের দুর্বলতার ফাঁদে ধরা দিলেন তিনি, নারীর মোহকে অস্বীকার করতে পারলেন না। এটাও এক ধরনের ভুল। কিন্তু ভুল হলে ক্ষমা নেই। বিচারে তাকে একশ ঘা আঘাত করার আদেশ দিলেন আমিরুল মুমেনিন। সত্তর ঘা দেবার পর তিনি ইন্তেকাল করলেন। যারা বেত্রাঘাত করছিল তারা থামলো কিন্তু ফারুকে আজম, রুষ্ট স্বরে বললেন, কোরআনের আইনের অন্যথা হবে না। ঐ মৃতদেহের উপরই আরো ত্রিশ ঘা লাগাও। সুতরাং ভুল করে পদস্থলন হয়েছে বললে আল্লাহ মাফ করবেন এমন নিশ্চয়তা নেই। অন্যায় কাজ এক ধরনের তীরের ফলার মত। হাত থেকে ফসকে গেলে তাকে ফেরাবার কোন উপায় নেই। আর ঐ তীর যা করবে তার দায়িত্ব তো তীরন্দাজকে নিতেই হবে।
প্রশ্ন: হুজুর, এ সম্পর্কে নবী করিম (সাঃ) কি কোন স্পষ্ট কথা উচ্চারণ করেছেন?
উত্তর: হ্যাঁ, করেছেন। হাদিসটি হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। হুজুর পাক (সাঃ) বললেন, হে প্রিয় কুরাইশগন, তোমরা নিজেকে বাঁচাও, তোমরা নিজের আত্মার সঙ্গে প্রেম করো, তোমরা যে নিজের নফসের উপরে জুলুম করছো এর বিচার আল্লাহ করবেন এবং সে গজব থেকে আমি তোমাদের বাঁচাতে পারবো না। হাদিসটি দীর্ঘ। এরপর তিনি পর্যায়ক্রমে হযরত আব্বাস, তার ফুফু… এবং তাঁর কন্যা ফাতেমাকে একই কথা বললেন। কোন কোন আলেম এ কথা বলেন যে, হুজুর এ কথা বলেছেন কারণ তাঁর বাঁচাবার ক্ষমতা নেই। সেটা ঠিক নয় কারণ তাহলে তাকে শাফিউল মুজনেবিন বলা হলো কেন? কেয়ামতের দিন রাসুলে পাক (সাঃ)-এর দৃষ্টি থাকবে বাঁ দিকে অর্থাৎ পাপীদের দিকে, তারই কৃপায় উদ্ধার পাবে সবাই, কিন্তু সেটা শাস্তি পাবার পর। মুহম্মদ (সাঃ)-এর মাঝে আল্লাহর সিফাত সব আছে-আল্লাহর জাব্বারিয়াত এবং কাহহারিয়াত তাও তার মধ্যে আছে। সূরা কাওসারে আল্লাহ, রাসুলে পাক (সাঃ)-কে যে কাওসারের সুসংবাদ দিচ্ছেন এর অর্থ শুধু নির্ঝরের পানি নয়। কাওসার মানে মঙ্গলের প্রাচুর্য আর এ মঙ্গল প্রদানের অধিকার যাকে আল্লাহ দিয়েছেন তিনিই তো উদ্ধারকারী। উদ্ধার করার ক্ষমতা যার আছে তিনি যখন বলছেন, আমি তোমাদের উদ্ধার করতে পারবো না যদি তোমরা নিজের উপর জুলুম কর, তখন বুঝতে হবে এ ধরনের পাপীদের দিকে তিনি তার হাত বাড়িয়ে দেবেন না।
প্রশ্ন: হুজুর, রোজ কিয়ামতে রাসুলে পাক (সাঃ) কি তার উম্মতদের মধ্যে কাউকে অস্বীকার করবেন?
উত্তর: হ্যাঁ করবেন। হুজুর বলেছেন, রোজ কিয়ামতের দিন কিছু লোককে আমি চিনতে পারবো। আমি বলবো, হে আল্লাহ আমি ওদের চিনি। আল্লাহ বলবেন, হে আমার হাবিব, আপনি জানেন না এরা কোন অপরাধে অপরাধী। এই আপাত ধার্মিক লোকগুলো বিদআতি, এরা আপনার ধর্মের মধ্যে নতুন জিনিষ আবিস্কার করেছিল। রাসুলে পাক (সাঃ) এদের দিকে তাকিয়ে বলবেন, দূর হও, দূর হও। আল্লাহ যে ধর্মকে পূর্ণতা দিয়েছেন সে ধর্মে যারা সংস্কারের নামে বিদআত নিয়ে আসে তাদের প্রতি এই ব্যবস্থাই কি সঙ্গত নয়?
সূচী – প্রশ্নোত্তর পর্ব
শাহ্ মুহাম্মাদ বাকী বিল্লাহ্ সিদ্দিকী আল-কোরায়েশী (রহঃ) ও
শাহ্ সৈয়দ রশীদ আহমদ জৌন পুরি (রহঃ)-তাহাঁদের
বক্তব্য ও কথোপকথন